ত্বকের প্রকারভেধে আমাদের দেশে ছেলে ও মেয়ে উভয়ই ফেসওয়াশ ব্যবহার করে থাকে। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ফেসওয়াশ একটু বেশি ব্যবহার করে থাকে।
স্কিন কেয়ার বা রুপচর্চার জন্য মেয়েদের কাছে ফেসওয়াশ খুবই গুরুত্বপুর্ণ একটা বৈশিষ্ঠ। তারা দৈনন্দিন তাদের রুপচর্চার যে রুটিন করে থাকে সেখানে সককাল বিকালে ফেসওয়াশ থাকেই।
তাই এই গুরুত্বপূর্ণ ফেসওয়াশ নির্বাচন করা বা তারা কোনটা ব্যবহার করবে সেটা সম্পর্কে আগে থেকে জানা বা ধারণা নেওয়া খুবই জরুরি।
কারণ এই ফেসওয়াশ সরাসরি ত্বকের সৌন্দর্য্যের উপর প্রভাব ফেলে। এমনকি সব ত্বকের জন্য একই রকম ফেসওয়াশ ব্যবহারের উপযোগী নয়। এই বিষয়টিও আমরা অনেকেই জানি না।
আসুন আজকে আমরা জেনে নিই যে মেয়েদের ফেসওয়াশ কোনটা ভালো এবং কেনো ভালো। এবং কোন ত্বকের জন্য কোন ফেসওয়াশ উপযোগী।
মেয়েদের ফেসওয়াশ কোনটা ভালো
ত্বকের ধরণ অনুযায়ী মুখে ব্যবহার করার জন্য ফেসওয়াশও আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। এর কারণ হলো আপনার ত্বক এবং অন্য যে কারো ত্বক নাও মিলতে পারে।
সেক্ষেত্রে আপনি যদি অন্য কারো পরামর্শ নিয়ে তার ব্যবহহার করা ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে যান তাহলে আপনার ত্বকের সমস্যা হতে পারে।
আমি সবসময় বলি যে ত্বক খুবই সুক্ষ বস্তু। তাই সঠিকটা জানুন আর নিজের ত্বক বাঁচান।
আচ্ছা চলুন আমরা জেনে নিই যে মানুষের সাধারণত কোন কোন ধরণের ত্বক হয়ে থাকে।
ত্বকের বৈশিষ্ঠঃ তৈলাক্ত ত্বক, শুষ্ক ত্বক, সংবেধনশীল ত্বক, মিশ্র ত্বক। এই ধরনের ত্বক সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া ত্বকের বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে যেমনঃ ব্রণযুক্ত ত্বক, ডার্ক স্পট, পিগমেন্টেশন ইত্যাদি।
কোন ত্বকের বেশিষ্ঠ্য কেমন হতে পারে এবং কোন ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে তা নিচে জানতে পারবেন।
১ - তৈলাক্ত ত্বক এবং প্রয়োজনীয় ফেসওয়াশ
আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি বৈশিষ্ঠের ত্বক হলো তৈলাক্ত ত্বক। এই ত্বকের বৈশিষ্ঠ হলো এই ত্বক সবসময় বা বেশিরভাগ সময়ে তৈলাক্ত ভাব থাকে।
এবং দূর থেকে কিংবা কাছে থেকে এই ত্বক চকচকে দেখায়। এই ত্বকে অতিরিক্ত তৈল থাকায় যা পুরো মুখে দেখা যায়।
এজন্য এই ত্বকে এমন ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে যাতে চেহারার তৈলাক্ত ভাব চলে যায়। এবং মুখের গ্লো বেড়ে যায়।
এই ত্বকের আরও বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ মুখের মধ্যে ছোট ছোট কিংবা মৃদু বড় আকারের ছিদ্র দেখা যায়।
আবার ত্বকের কালো দাগ সহ ব্রণ উঠে। আপনাদেরকে বলে রাখি যে তৈলাক্ত ত্বকে সবচেয়ে বেশি ব্রণ উঠে থাকে। বা উঠার সম্ভাবনা হয়ে থাকে।
সেরা ফেসওয়াশঃ
১. Neutrogena Oil-Free Acne Wash - এখানে তৈলাক্ত ত্বকের যে সমস্যার কথা বললাম তার অধিকাংশ সমস্যাই এই ফেসওয়াশ দিয়ে দূর করা সম্ভব।
সুবিধাঃ
- এই ফেসওয়াশ দিয়ে ব্রণ দূর করা এবং নতুন করে ব্রণ উঠা প্রতিরোধ করবে।
- এছাড়াও ত্বৈলাক্ত ভাব দূর করা এবং ছোট বড় ছিদ্র থাকার সমস্যাও দূর করে থাকে।
আসলে তৈলাক্ত চেহারায় তৈল দূর করতে স্যালিসাইলিক এডিডের প্রয়োজন হয়। যা এই ফেসওয়াশটিতে আছে।
২. Clean & Clear Foaming Face Wash - মেয়েদের মুখের ব্রণ দূর করা এবং চেহারা উজ্জলের জন্য Neutrogena Oil-Free Acne Wash ফেসওয়াশের সাথে সাথে Clean & Clear Foaming Face Wash ফেসওয়াশ খুবই জনপ্রিয়।
সুবিধাঃ
- এই ফেসওয়াশটির বৈশিষ্ঠ হলো এই ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে আপনার মুখে পুংখানুপুংখভাবে পরিষ্কার করা যাবে।
- সাথে সাথে আপনার মুখের অতিরিক্ত তৈল দূর করতে তাও আবার কোনো শুষ্কতা ছাড়াই।
অনেকসময় দেখা যায় যে মুখের ব্রণ বা তৈল দূর করার জন্য বিভিন্ন ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে সেগুলোর জন্য মুখের তৈলক্তা দূর হয় ঠিকই তবে মুখে শুষ্কতা চলে আসে।
তবে এই ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে আপনার মুখে কোনো শুষ্কতা আসবে না। তাই বলা চলে যে আপনার মুখের অতিরিক্ত তৈল দূর করার জন্য এই ফেসওয়াশটি অত্যন্ত ভালো হবে।
২ - শুষ্ক ত্বক এবং প্রয়োজনীয় ফেসওয়াশ
ঠিক যেমনভাবে অনেকের মুখ সবসময় তৈলাক্ত হয়ে থাকে সেরকমভাবে অনেকের মুখ শুষ্ক হয়ে থাকে। তাদেরকে আপনি দেখলেই বুঝতে পারবেন।
শুষ্ক ত্বক সবসময় রুক্ষ, ফাটা এবং খসখসে দেখায়। এই কারণে অনেকরে চেহারা ফর্শা হবার কারণেও তাদেরকে তেমন একটা সুন্দর দেখায় না।
তাদের চেহারা সবসময় শুকনো এবং টানটান থাকায় শীতকালে তাদেরকে আরও একটু বেশি খারাপ দেখায়।
সেরা ফেসওয়াশঃ
এমন শুষ্ক চেহারায় ব্যবহার করতে হবে তৈলাক্ত জাতীয় কোনো ফেসওয়াস। যেগুলো সবসময় মুখকে পরিক্ষার রাখবে এবং শুষ্ক হতে রক্ষা করবে।
সেই সাথে চেহারাকে সবসময় ময়েশ্চারাইজ করে রাখবে। তাহলে চলুন দেখে নিই।
১. Cetaphil Gentle Skin Cleanser - মেয়েদের চেহারাকে শুষ্ক থেকে স্বাভাবিক করতে এবং সংবেদনশীল ত্বকের চর্চার জন্য এই ফেসওয়াশ ব্যবহার করে থাকে।
শুষ্ক ত্বকের পাশাপাশি সংবেদনশীর ত্বকের চর্চায় নায়াসিনামাইড (ভিটামিন বি৩) প্যান্থেনল (ভিটামিন বি৫) এবং হাইড্রেটিং গ্লিসারিং দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
আপনি যখন সাবান বা পানি দিয়ে আপনার মুখ পরিষ্কার করবেন তখন ত্বক হাইড্রেটেড রেখে ত্বক শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে।
বিশেষ করে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ পরিক্ষিত যে এটি আপনার সংবেদনশীর ত্বককে কোমল রাখে। মানে আপনার চেহারা সফট থাকবে।
২. Neutrogena hydro boost water gel cleanser - এই প্রোডাক্টটি শুষ্ক ত্বকের লোকের ছাড়াও অন্যান্য ত্বকের লোকের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
কারণ এই neutrogena hydro boost water gel cleanser ফেসওয়াশটি সংবেদনশীল ত্বক এবং স্বাভাবিক ত্বকের মানুষও ব্যবহার করতে পারেন। তাতে কোনো সমস্যা হয় না।
এই ফেসওয়াশটি পানি জাতীয় তাই শুষ্ক ত্বককে খুব ভালোভাবে তেলতেলে কিংবা শুষ্ক ভাব থেকে মুক্তি দিতে পারে।
৩ - সংবেদনশীল ত্বক
এই পোস্টের শুরুতে এবং অনেক অংশে সংবেদনশীল ত্বকের কথা উল্লেখ করেছি কিন্তু সংবেদনশীল ত্বক কি তা নিয়ে আলোচনা করিনি।
সংবেদনশীল ত্বক কিছুটা মিশ্র ত্বকের মতো। যেখানে সেখানে কিংবা যেকোনো পরিবেশে অথবা যেকোনো উপাদানে এই চেহারা লাল হয়ে যায়।
আবার মাঝে মাঝে এই ত্বক শুষ্কও হয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ সময় লালই থাকে। এবং এই চেহারার বৈশিষ্ঠের মানুষও তেমন বেশি না।
সোজা কথায় বুঝতে চাইলে সংবেদনশীল ত্বক হলো সেনসিটিভ ত্বক। অর্থাৎ এসব ত্বক সবসময় সেনসিটিভ হয়ে থাকে। যেকোনো ফেসওয়াশ ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
সেরা ফেসওয়াশঃ
সংবেনদশীল ত্বকে সাধারণত এলার্জি বেশি থাকে। যার ফলে বাচাই করার ব্যাতিত কোনো ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে এলার্জিগত সমস্যা দেখা দেয়।
তবে এই বৈশিষ্টের মানুষজন আজকের এই পোস্টটি পড়ে যদি এখানে উল্লেখ করা ফেশওয়াশ ব্যবহার করেন তবে আপনার কাছে অনুরোধ থাকবে যে আপনি একবার চর্ম বিশেষজ্ঞ দেখাতে পারেন।
১. la roche-posay toleriane hydrating gentle cleanser - আপনর যদি সেনসিটিভ ত্বক হয়ে থাকে তাহলে আপনি এটি ব্যববহার করতে পারেন।
তবে বাংলাদেশে এটি পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। কারণ এই প্রোডাক্টসটি অ্যামেমরিকার।
এই ফেসওয়াশটি আপনি অনেক ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন। যেমনঃ স্বাভাবিক ত্বক, সেনসিটিভ (সংবেদনশীল ত্বক) বা শুষ্ক ত্বক।
কিন্তু এটি বেশিরভাগ ব্যবহহার হয় সেনসিটিভ ত্বকের জন্য।
২. Ultra-Calming Foaming Cleanser - এখানে সেনসিসটিটভ ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো হচ্ছে Ultra-Calming Foaming Cleanser.
এবং এটি খুব জনপ্রিয়ও বটে। এটার বৈশিষ্ঠ হচ্ছে এটি আপনার ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে না আবার অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাবও করে না।
এটি সর্বধা ত্বককে মসৃণ রাখে। পাশাপাশি এটা কোমলভাবে ত্বকের ময়লা, তেল এবং মেককআপকে সরিয়ে ত্বককে উজ্জল করে।
আপনি এই ফেসওয়াশটিকে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারবেন। সেজন্য এটি সুগন্ধমুক্ত, সাবান মুক্ত, নন-কমেডোজেনিক এবং হাইপোঅ্যালার্জেনিক।
৪ - মিশ্র ত্বক
মিশ্র ত্বক এমন একটি ত্বক যেখানে আপনার ত্বকে শুষ্কতার পাশাপাশি ত্বৈলাক্ত ভাবও থাকে। তাই আপনি যদি তেল দূর করার জন্য ফেসওয়াশ ব্যবহার করেন তাহলে আপনার মুখে শুষ্কতা ভাব থেকে যাবে।
এজন্য এই ত্বকে ফেসওয়াশ ব্যবহহার করার জন্য খুবই সতর্ক থাকতে হবে। অর্থাৎ আপনি এমন কোনো ফেসওয়াশ ব্যবহার করবেন যাতে আপনার ত্বকের শুষ্কতাও যায় আবার তৈলাক্তভাবও যায়।
সেরা ফেসওয়াশ
সাধারণত এই ত্বকের জন্য বিশেষ কিছু ফেসওয়াশ আছে যেগুলো ব্যবহার করলে মুখের শুষ্ক কিংবা তৈলাক্ত উভয় ভাব দূর করতে পারে।
১. SkinActive Micellar Foaming Gel Cleanser - এই SkinActive Micellar Foaming Gel Cleanser খুবই দারুনভাবে কাজ করে।
কারণ এই ফেসওয়াশ ব্যবহারের সময় বেশি ঘষতে হয় না। এই ফেসওয়াশটি ময়লা দূর করতে খুবই শক্তিশালী।
তবে এই ফেসওয়াশটি সব ত্বকের জন্য ব্যবহার করা হয় বলে আমরা এটিকে মিশ্র ত্বকের ব্যবহারেরর জন্য সিলেক্ট করেছি।
২. Ultra Facial Cleanser - মিশ্র ত্বকে সব বৈশিষ্ঠ থাকায় এখানে আপনি প্রায় অনেক রকম ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারলেও এখানে উল্লেখ করা এই Ultra Facial Cleanser ব্যবহার করা বেশি ভালো হবে।
অন্য আরও ফেসওয়াশ আছে। সেগুলোরও ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে এই ফেসওয়াশটি ত্বকের পিএইচ বজায় রাখে।
যার ফলে আপনার ত্বকে ক্সতি হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
ব্রণ যুক্ত ত্বক এর জন্য ফেসওয়াশ
অধিকাংশ চেহারায় বেশিরভাগ সমস্যা হয় ব্রণের কারণে। এই ব্রণের জন্য ত্বকের সৌন্দয্য নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই ব্রণ চেহারায় নিচের দুটি ফেশওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।
১. Neutrogena Rapid Clear Stubborn Acne Cleanser - এই ফেসওয়াশটি ব্যবহারের সময় দৈনিক একবার করে ব্যবহার করতে পারেন।
এরপর ডাক্তারের পরামর্শে আপনি দৈনিক ২ থেকে ৩ বাও ব্যবহহার করতে পারবেন। এই ফেসওয়াশটি আপনার মুখে থাকা ব্রণ ধ্বংস করে এবং ভবিষ্যতে ব্রণ যাতে না উঠে তার প্রতিরোধ করে থাকে।
২. Clean & Clear Continuous Control Acne Cleanser - এই ফেসওয়াশটিও ব্রণ দদুর করতে খুবই কার্যকরি।
তবে এই মুহূর্তে এটি মার্কেটে নেই। তাই এই ফেসওয়াশ সম্পর্কে বিস্তারিত বলছি না। তবে আপনারা হয়তো এখনো এই ফেসসওয়াশটি পেলেও পেতে পারেন।
উপসংহার
ফেসওয়াশ নির্বাচন করার সময় ত্বকের ধরন এবং সমস্যা বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ফেসওয়াশ ত্বককে সুস্থ এবং উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
তাই, নিজের ত্বকের ধরন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ফেসওয়াশ নির্বাচন করুন এবং ত্বকের যত্ন নিন।
এছাড়াও, ফেসওয়াশ ব্যবহারের পর ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে ভুলবেন না। কারণ ত্বকের প্রাকৃতিক তেল বজায় রাখতে এবং ত্বককে হাইড্রেট রাখতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এবং আমার ব্যকিকত্গত মততামমত হলো আপনারা আপনাদের তত্বকের জন্য দি ফেসওয়াশ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তবে আগে ডাক্ততারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
0 Comments